শবে কদরের মর্যাদা ও আমাদের করণীয়

Print Friendly, PDF & Email

Loading

শবে কদরের মর্যাদা

রামাদান মাস অন্য যে কোনো মাসের তুলনায় অনেক মর্যাদাপূর্ণ । এ মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। এ মাসেই রয়েছে শবে কদর যা রমাদান মাসের শেষ দশকে । কুরআনে শবে কদরের মর্যাদার ব্যপারে আল্লাহ্‌ বলেন-

“শবে কদর এক হাজার মাস থেকেও উত্তম “

                              (সূরা কদর ৯৭:৩) 

এ রাতের মর্যাদা এক হাজার মাস প্রায় ৮৪ বছর ইবাদতের চেয়েও উত্তম । আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের কতো বড় সুযোগ দিয়েছেন । এ রাতে ইবাদত করলে পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেন।

শবে কদরের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহা আলাইসেস সালাম বলেন-

“যদি কেউ ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের নিয়্যাতে লাইলাতুল ক্বাদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে ।“

                         বুখারী আস সহীহ ২/২৭২,৭০৯

                           মুসলিম আস সহীহ ১/৫২৩

আমরা মনে করি- শবে কদর ২৭ শের রাতে । এ ধারণা ঠিক নয়, যদিও আমাদের সমাজের বহুল প্রচলিত একটি রীতি । ২৭ শের রাতে শবে কদর এ রকম কোন হাদীস নেই। অনেক সাহাবী, তাবেয়ী, আলেম  ২৭ শের রমদানে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলেছেন।

শবে কদরের মর্যাদা

শবে কদরে আমাদের করণীয়

আমাদের দায়িত্ব রমদানের শেষ দশ রাতের প্রতিটি রাতকে “শবে কদর” মনে করে ইবাদত করা । ২৭ শের রাতে  একটু বেশী গুরুত্ব দেওয়া । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশ রাত্রি প্রায় সারা রাত ইবাদত করতেন।

আয়াশা (রাঃ) বলেনঃ

“যখন রামাদানের শেষ দশ রাত এসে যেত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রি জাগরিত থাকতেন , তাঁর পরিবারের সদ্যসদের জাগিয়ে দিতেন, তিনি অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকতেন এবং সাংসারিক, পারিবারিক দাম্পত্য কাজ কর্ম বন্ধ করে দিতেন । “

                           বুখারী , আস সহীহ ২/৭১১  

                           মুসলিম, আস সহীহ ১/৮৩২

আমাদের ইবাদত হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুসারে । শবে কদরের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

“যদি কেও লাইলাতুল ক্বাদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমাদানের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে । “

                           মুসলিম, আস সহীহ ১/৮২৩


আরো পড়ুন – শবে বরাত- কুরআন ও হাদীসের আলোকে

শেষ দশ রাত্রিতে যে সব ইবাদত আমরা করতে পারি

১.নামাজ পড়া

২. কুরআন তিলাওয়াত করা

৩. দরুদ পড়া

৪. দোয়া করা

৫. জিকির করা

৬. আল্লাহ্‌ নিকট ক্ষমা চাওয়া

৭. দান করা

শেষ দশ রাত্রিতে যে সব কাজ বর্জন করতে হবে

১. সময়ের অপচয় না করা

২. বেশী খাওয়া দাওয়া না করা

৩. ঈদের কেনা কাটায় ব্যস্ত না থাকা

৪. সামাজিক মাধ্যমে সময় ব্যয় না  কারা  

শবে কদরের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দোয়ার কথা বলেছেন ।  আমরা বেশী বেশী এই দোয়া পাঠ করতে পারি –

‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুব্বুন, তুহিব্বুল আফ্ওয়া‘, ফা‘ফু ‘আন্নী’’

অর্থঃ “হে আল্লাহ্‌ আপনি ক্ষমাশীল মর্যাদাময় আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন । “  

                           তিরমিযী আস সুনান ৫/৫৩৪

                          ইবনু মাজাহ আস সুনান ২/১২৬৪

    হাদীসটি হাসান

শবে কদর পাওয়ার  অন্যতম উপায় হলো ই’তিকাফ করা । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আজীবন ইতিকাফ করেছেন । আয়েশা (রাঃ) বলেন –

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন । তিনি তাঁর ওফাত পর্যন্ত এভাবে ইতিকাফ করেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রীগন তার পরে ইতিকাফ করেন ।“

                          বুখারী , আস সহীহ ২/৭১৩  

                           মুসলিম, আস সহীহ ১/৮৩১

শবে কদরের মর্যাদা অনুধাবন করে , শেষ দশ রাত্রি আমরা যেন ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতে পারি, আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন । আমিন ।।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *